মনিপুষ্পক খাঁ: ঐতিহাসিকভাবে সাঁওতালদের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি চদর বদর। চদর বদর হল ভারতের বৃহত্তম আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির অন্যতম সাঁওতালদের পুতুল নাচের এক প্রাচীন রূপ। ঐতিহ্যগতভাবে এই আঙ্গিকটি লোকশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি সাঁওতালদের প্রাচীন ভাষাকেও বহন করে চলেছে। চদর বদর শব্দটি চাদর বাঁধুনি ( একটি কাপড়ে মোড়ানো ) থেকে এসেছে, যেখানে বাঁশ ও কাপড়ের ছাউনির মতো কাঠামোর মধ্যে পুতুল গুলিকে রাখা হয়।

চদর বদর শিল্পীরা কুঁড়েঘরের মতন একটি কাঠামো কে প্রদর্শনীর জায়গায় নিয়ে যান। সংগীতশিল্পী এবং নৃত্য শিল্পীরাও পুতুল নাচের শিল্পীদের সঙ্গে থাকেন। প্রতিটি পরিবেশনায় পুতুল গুলিকে নির্দিষ্ট ভাবে সাজানো হয়। পুরুষ পুতুলের উল্টোদিকে থাকে মহিলা পুতুলদের একটা সারি। মাঝখানে একটি পুতুল থাকে যার নাম- রসিক। যে সব সময় ডিগবাজি খাওয়ার মতন অবস্থায় নাচতে থাকে। যে গানগুলি পরিবেশনার সময় গাওয়া হবে , যে গল্পটি বর্ণনা করা হয় পুতুল গুলিকে সেই অনুযায়ী উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন , উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

চদর বদর সাহিত্য, হস্তশিল্প ও শিল্পকলা পরিবেশন এর দক্ষতাকে একত্রিত করে গল্প বলার এক অনন্য ঐতিহ্য, যা একইসঙ্গে বিনোদন ও শিক্ষামূলক । ঐতিহ্যগতভাবে চদর বদর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসামের আদিবাসী সাঁওতাল গোষ্ঠীর লোকেরা অনুসরণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় চদর বদরের চর্চা রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বিস্তীর্ণ জঙ্গলমহল অঞ্চলের আদিবাসীরা এই চদর বদর কে এখনও সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন।