প্রতিবেদন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ত্তরপ্রদেশের প্রয়াগ রাজে ত্রিবেণী সঙ্গমে ৪৫ দিন ধরে চলা সন্ন্যাসী, সাধ, সন্ত, কল্পবাসী, এবং তীর্থযাত্রীদের ধর্মানুষ্ঠান মহা কুম্ভ মেলা। কুম্ভ মেলা প্রতি প্রায় ১২ বছরে একবার চারটি স্থানে হয় প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িনী, হরিদ্দার, এবং নাসিক, পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতি সূর্য এবং চাঁদের অবস্থান অনুযায়ী এর স্থান নির্ধারণ করা হয়। ১৪৪ বছর আগে বৃহস্পতি গ্রহের সারিবদ্ধতা১২ বছরের ব্যবধান দ্বারা নির্বাচন করা হয়। যখন এই স্বর্গীয় বস্তুগুলি অনুকুল অবস্থায় থাকে আত্মিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিবেচিত হয়।

তখনই জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ জ্যোতিষী সারিবদ্ধতার উপর নির্ভর করে চারটি স্থানে কুম্ভ মেলার স্থান নির্বাচন করা হয়। এলাহাবাদ বর্তমানে প্রয়াগ রাজ, হরিদ্দার, উজ্জয়নী, এবং নাসিক এর প্রতিটি ১২ বছরের চক্র অনুসরণ করে। যেমন যখন বৃহস্পতি বিষ রাশিতে থাকে সূর্য ও চন্দ্র মকর রাশিতে অবস্থান করে তখন প্রয়াগ রাজে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয় হলো পবিত্র স্থানে ঐশ্বরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ভক্তরা পবিত্র নদীতেস্নান করে গঙ্গা-যমুনা এবং অদৃশ্য সরস্বতীর সঙ্গম ক্ষেত্রে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নাগা সাধু বা কঠোর সন্ন্যাসীরা প্রাণবন্ত মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এবার আমি এই শতাব্দী প্রাচীন কুম্ভ মেলার ইতিহাস আপনাদের অবগত করি। বর্তমানে প্রয়াগরাজ পূর্বে এলাহাবাদ নামে পরিচিত ছিল বহু শতাব্দী ধরে কুম্ভ মেলা উদযাপন হয়ে আসছে। রাজা হর্ষবর্ধনের সাত শতকে রাজত্বকালে উদযাপনটি আরো ব্যাপ্তি ও সুপরিচিতি লাভ করে। একটি জাতি ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এর ব্যাপ্তি এবং এলাবাদের ত্রিবেণী সঙ্গমকে এর উল্লেখিত স্থান হিসাবে তুলে ধরতে রাজা হর্ষবর্ধনের ভূমিকাই প্রধান হিসাবে বিবেচিত হয়। ভারতবর্ষের চারটি রাজ্য কুম্ভ মেলা উদযাপন করে, প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান আলাদা আলাদা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ণ কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগ রাজে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্ধ কুম্ভ মেলা ৬ বছর পর প্রয়াগ রাজ ও হরিদ্দারেকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মহা কুম্ভ মেলা প্রতি ১৪৪ বছর পর১২ টি পূর্ণ কুম্ভ মেলার সমাপ্তি হবার পর প্রয়াগ রাজি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা 2025। ১৩ই জানুয়ারি থেকে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দিন ধরে চলবে এই মেলা। এখন দেখে নেয়া যাক কোন কোন তারিখ পুণ্য স্নানের জন্য বিবেচিত হয়েছে। ১৩ই জানুয়ারি পৌষ পূর্ণিমা, ১৪ ই জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি, ২৯ শে জানুয়ারি মৌনি আমাবস্যা।

৩রা ফেব্রুয়ারি বসন্ত পঞ্চমী। ২৬ শে ফেব্রুয়ারি মহা শিবরাত্রি। কোটি কোটি মানুষের সমাগমে প্রায় ১৬ হাজার একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ত্রিবেণী সঙ্গমে দুটি পূর্ণ স্নানের দিন ইতি মধ্যেই পার হয়েছে। পুন্নার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নদীর উপরে ৩০ টি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পঞ্চাশ হাজারের মতো বায়ো টয়লেট। ৩৭টি অস্থায়ী পুলিশ থানা নজরদারি ক্যামেরা এবংনিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে ত্রিবেনী সঙ্গম। তের তারিখ এবং ১৪ তারিখে প্রায় ছয় কোটি মানুষ পূর্ণ স্নান বা সাহি স্নান সাড়েনগঙ্গা যমুন সরস্বতীর সঙ্গম ক্ষেত্রে।